মধ্যরাতের ট্রেন

লোককথায় শোনা যায়—মধ্যরাতের ট্রেন কখনও সময়মতো আসে না, আর যে আসে, সে আর ফেরে না। কথাটা রাহুল ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে, কিন্তু সে এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করত না।সেদিন, কাকতালীয়ভাবে, তার শেষ ট্রেন মিস হয়ে গেল। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে স্টেশন মাস্টার হেসে বলল,“একটাই ট্রেন আছে… তবে সাবধান, এটা কিন্তু মধ্যরাতের ট্রেন।”তার ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি খেলে গেল, কিন্তু রাহুল তখন তা আমল দিল না।

মধ্যরাতের ট্রেন

অরণ্যপুর স্টেশনের নীরবতা ও মধ্যরাতের ট্রেন

রাত তখন ১২টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি। অরণ্যপুর স্টেশন যেন মরুভূমির মতো ফাঁকা। দূরে কোথাও শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে, আর লোহার রেললাইনে বাতাসে ঠকঠক শব্দ হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তে একটা মরচে ধরা লন্ঠন কাঁপছে, তার হলুদ আলো কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে।রাহুল একা দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মনে হচ্ছে দূর থেকে কেউ যেন তাকিয়ে আছে। পেছনে ঘুরে দেখল—পুরনো ধূসর কোট পরা এক বৃদ্ধা, যার মুখ অন্ধকারে ঢাকা। তিনি ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললেন,“ট্রেন আসছে…”

ট্রেনের আগমন

হঠাৎ কর্কশ হুইসেলের শব্দ, আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভেদ করে ট্রেনটা এগিয়ে এল। কালো, জংধরা, জানালার কাচ ফেটে গেছে, আর ইঞ্জিন থেকে বেরোচ্ছে এক অদ্ভুত পোড়া গন্ধ—যেন অনেক পুরনো কাপড় আর হাড় পুড়েছে।রাহুল কামরায় ঢুকতেই এক শীতল বাতাস তার গায়ে কাঁটা দিয়ে তুলল। সিটে যাত্রীরা বসে আছে বটে, কিন্তু সবাই মুখ ঢেকে রেখেছে—কেউ স্কার্ফে, কেউ চুলে, কেউ আবার ছায়ার আড়ালে।

যাত্রীদের মুখে মধ্যরাতের ট্রেনের কথা

ট্রেন চলতে শুরু করল, জানালার বাইরের দৃশ্য অদ্ভুতভাবে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে—একই গাছ, একই কুয়াশা, একই মাঠ, যেন ট্রেন কোথাও পৌঁছাচ্ছে না।রাহুল পাশের সিটে বসা মানুষটির দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে সেই যাত্রী মুখ তুলল… চোখ নেই, শুধু শূন্য কালো গর্ত, আর ঠোঁটে বিকৃত এক হাসি। ফাঁপা গলার স্বরে সে বলল,“আমরা সবাই একদিন তোমার মতো ছিলাম…”

ফিসফিসানি ও ছায়ারা

পাশের কোণ থেকে বৃদ্ধা উঠে এলেন। চুল এলোমেলো, মুখের চামড়া যেন কুঁচকে শুকিয়ে গেছে। তিনি ধীরে ধীরে রাহুলের কানের কাছে এসে বললেন,“তুমি তো এখনও জীবিত… এখানে কী করছ?”তারপর চারপাশে ফিসফিস শব্দ বাড়তে লাগল—সব যাত্রীর মুখ থেকে একই কথা ভেসে আসছে,“নেমে পড়ো… নেমে পড়ো…”

https://www.facebook.com/profile.php?id=61578486594004

অজানা স্টেশন

ট্রেন হঠাৎ থেমে গেল। বাইরে এক অচেনা স্টেশন—নেই কোনও আলো, নেই কোনও নামফলক, শুধু ঘন কুয়াশা আর মাটিতে পড়ে থাকা ভাঙা কফিনের মতো কাঠের বাক্স। বৃদ্ধা বলল,“এখানেই শেষ… এখান থেকে ফেরার ট্রেন আর নেই।”রাহুল ভয়ে পিছিয়ে গেল, কিন্তু দেখল—তার আসনের জায়গায় এখন একজন বসে আছে, যিনি তারই মতো দেখতে… কিন্তু চোখ ফাঁকা, ঠোঁটে সেই অমানুষি হাসি।হুইসেলের কর্কশ শব্দে ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করল, আর কুয়াশায় মিলিয়ে গেল চিৎকার—“স্বাগতম মধ্যরাতের ট্রেন-এ…”

হুইসেলের কর্কশ শব্দে ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করল, আর কুয়াশায় মিলিয়ে গেল চিৎকার—“স্বাগতম মধ্যরাতের ট্রেন-এ…

আমাদের অন্যান্য রোমাঞ্চকর গল্প :

https://bangla.riseofthetimelords.com/%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a7%8c%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa/

2 thoughts on “মধ্যরাতের ট্রেন”

Leave a Comment

error: Content is protected !!