লেখিকা
paushali Banerjee
শ্যামবরণ আকাশটা সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে আছে। হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকায়, যেন পুরোনো ক্ষত খুলে যাচ্ছে কোনো প্রেমের দুঃখগাথা। সেই আকাশের নিচে বসে আছে রুদ্র, এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে, বারান্দার কাঠের চেয়ারে। তার চোখে ছিলো অপেক্ষার ছায়া, আর মনটা যেন বৃষ্টির শব্দে গলে যাচ্ছে।
আজ থেকে সাত বছর আগে, এমনই এক বর্ষার দিনে সে প্রথম দেখেছিলো ঐশীকে। কলেজের প্রথম দিন, বৃষ্টিতে ভিজে চুলের গোড়ায় জল গড়িয়ে পড়ছিলো তার। কাঁধে একটা নীল রঙের ব্যাগ, চোখে একরাশ অবাক দৃষ্টি— আর সেই হাসি, যেন আকাশের রং বদলে দেয়।
ঐশী ছিল উচ্ছল, রঙিন, আর রুদ্র ছিল শান্ত, গভীর। দুজন যেন সম্পূর্ণ বিপরীত, তবু বৃষ্টির দিনে দু’জনের দেখা মানেই ছিলো চায়ের দোকানে ভেজা কাপড়, আর চোখের ভাষায় কবিতা
একদিন, রুদ্র হঠাৎই বলেছিলো,— “তুই বর্ষায় কাঁদিস?”ঐশী হেসে বলেছিলো,— “না, বর্ষায় আমি ভালোবাসি।”সে দিনের সেই কথায়, রুদ্র চুপ করে গিয়েছিলো। সেদিন সে বুঝেছিলো, ঐশীকে সে ভালবাসে
তাদের ভালোবাসা কোনো নাটকীয় ছিল না। সেটা ছিল রোজকার দিনে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। হাতে হাত রাখা, চোখে চোখ রাখা, আর বৃষ্টির দিনে একসাথে ভিজে যাওয়ার মতো সহজ আর গভীর।
কিন্তু সময়, সে তো সবকিছুর রাজা।কলেজ শেষ হতেই, ঐশী চলে যায় অন্য শহরে, হায়দরাবাদে চাকরির জন্য। প্রথমদিকে ফোন, চিঠি, ভিডিও কল— সবই ছিল। তারপর, ব্যস্ততা, দুরত্ব, আর বাস্তবতা… একসময় যোগাযোগ কমে এলো।
একদিন বর্ষার দুপুরে, রুদ্র শুধু একটুকরো মেসেজ পেলো—”আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”তারপর কেটে গেছে সাত বছর। কিন্তু রুদ্রের হৃদয়ে এখনো ঐশীর গন্ধ থাকে, বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় ঐশীর হাসি।আজও সেই চায়ের কাপের পাশে সে দুটো চামচ রাখে— এক নিজের জন্য, এক ঐশীর জন্য।
বৃষ্টি বাড়তে থাকে। হঠাৎ, গেটের পাশে একটা ট্যাক্সি থামে। ভিজে ছাতা হাতে একজন নামলো। সাদা শাড়ি, চোখে চেনা চাহনি।রুদ্রের বুক ধক করে উঠলো।ঐশী।হ্যাঁ, ঐশী। সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চুপচাপ।রুদ্র উঠে দাঁড়াল, কিছু বলার আগেই ঐশী বললো—— “আজ কলকাতা ফিরলাম। ভেবেছিলাম, যদি এক কাপ চা পাওয়া যায়…”রুদ্র চুপচাপ ভেতরে নিয়ে গেলো তাকে।চা তৈরি হলো, আবার সেই পুরনো কাপে।
ঐশী জানাল, সে ডিভোর্স করেছে। একটা নিঃসঙ্গতা বেছে নিয়েছে — কারণ সেই দাম্পত্যে ভালোবাসা ছিল না, ছিল শুধু সামাজিক শৃঙ্খল।সে বলল,— “তুই জানিস রুদ্র, আমি এখনও বর্ষায় ভালোবাসি। আর তোকে…”রুদ্রের চোখে জল এসে গেল।সে ধীরে ধীরে ঐশীর হাত ধরলো।বৃষ্টির শব্দ তখন ছাদে, গাছে, জানালায়— চারদিকে প্রেমের গানের মতো বাজছিলো।রুদ্র বলল,— “চলে আয়। এবার আর দুরত্ব থাকুক না।”সেই বর্ষার দিন, সাত বছর পর— প্রেম ফিরে এসেছিল।এক কাপ চা, কিছু পুরনো কথা, আর এক ভেজা বারান্দা— সেখানে দুইটি হৃদয় আবার মিলেছিলো।
আমাদের অন্য রোমাঞ্চকর গল্প: