বনবাসী তান্ত্রিক

শীতের এক গভীর রাতে, শাল-পলাশে ঘেরা পূর্ববঙ্গের এক অজ পল্লীতে,বনবাসী তান্ত্রিক এর গুজব রটে গেল—“কালো কাপড় পরা এক তান্ত্রিক এসেছেন জঙ্গলের ভিতরে, আগুন জ্বালিয়ে কিছু সাধনা করছেন।”গাঁয়ের ছেলে-মেয়েরা ভয়ে সন্ধ্যার পর আর বাইরে বেরোয় না।

(আপনার মত গল্প পাগল পড়ুয়া দের জন্য

https://facebook.com/groups/428138033892226/ )

ভীম ও বনবাসী তান্ত্রিকের প্রথম সাক্ষাৎ

তবে সব গাঁয়ের লোক সমান নয়। ভীম নামে এক তরুণ, যার পিতা এক কালে বৈরাগী ছিলেন, সে খুব কৌতূহলী হয়ে পড়ল। রাতের আঁধারে, হাতে কুপি নিয়ে সে চলল জঙ্গলের গভীরে। গিয়ে দেখে, এক বৃদ্ধ, মাথায় জটা, শরীরে ছাই মাখা, চোখে তীব্র দৃষ্টি—আগুনের পাশে বসে তন্ত্রমন্ত্র জপছেন। তাঁর চারপাশে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা, যেন মাটির ওপরে মায়াজাল রচিত হয়েছে।ভীম সাহস করে বলে উঠল, “মহারাজ, আপনি কি তান্ত্রিক?”বৃদ্ধ চোখ তুললেন। দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “আমি একজন তপস্বী। তন্ত্র জানি, তবে আমি ভয় দেখাতে আসিনি। বরং এই মাটি শুদ্ধ করতে এসেছি।

এক বনবাসি তান্ত্রিক

ভীমের সাহসিকতা ও বনবাসী তান্ত্রিকের শর্ত

ভীম বিস্মিত, “এই মাটি? একে শুদ্ধ করতে হবে কেন?”তান্ত্রিক বললেন, “এই জায়গায় একসময় এক অশুভ শক্তির আরাধনা হত। রক্ত, অভিশাপ, লোভের ছায়া পড়েছিল এখানে। আমি সেই ছায়া কাটাতে এসেছি। কাল অমাবস্যা, সেই রাতেই সাধনা সম্পূর্ণ হবে।

”ভীম কৌতূহলে ভরা চোখে জিজ্ঞেস করল, “আমি কী আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”তান্ত্রিক চোখ বুজে বললেন, “হ্যাঁ, তবে সাহস দরকার। তুমি যদি সত্যিই প্রস্তুত হও, তবে কাল রাত আটটার পর এখানে এসো। তবে খালি হাতে এসো না—একটি তুলসী পাতা, এক চিমটি গঙ্গাজল আর একটি সাদা কাপড়ে জড়ানো তোমার পবিত্রতম বিশ্বাস নিয়ে আসো।”

সেই রাতে ভীম ঘুমোতে পারল না। পরদিন সন্ধ্যাবেলা সবকিছু নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আবার জঙ্গলে এল। তান্ত্রিক তখন যজ্ঞমঞ্চে বসে, চারদিক ধূপ-ধুনোয় ছেয়ে আছে। আকাশে মেঘ জমেছে, হাওয়ায় একটা অদ্ভুত কাঁপুনি।তান্ত্রিক বললেন, “ভয় পেও না। যখন আমি মন্ত্র পাঠ শুরু করব, তখন তুমি যজ্ঞে এই তিনটি বস্তু অর্ঘ্য হিসেবে দেবে। তোমার বিশ্বাসই হবে প্রধান অস্ত্র।”যজ্ঞ শুরু হল। মন্ত্র ধ্বনির সাথে সাথে বাতাস ভারী হয়ে উঠল। হঠাৎ ঝড় উঠে গেল। আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। তখনই এক ছায়ামূর্তি আগুনের মাঝখান থেকে উঠতে লাগল।

বনবাসী তান্ত্রিকের আশীর্বাদ ও বনের মুক্তি

ভীম দেখে স্তম্ভিত—মূর্তিটি যেন অন্ধকারের, ভিন্ন মূর্তি তার মুখহীন, হাতদুটি প্রসারিত।তান্ত্রিক চিৎকার করে বললেন, “অর্ঘ্য দাও! এখনই!”ভীম তুলসীপাতা, গঙ্গাজল, আর বিশ্বাসভরা সাদা কাপড় যজ্ঞে অর্পণ করল। মুহূর্তে এক আলো ছড়িয়ে পড়ল। ছায়ামূর্তিটি চিৎকার করে মিলিয়ে গেল। ঝড় থেমে গেল। চারপাশে নেমে এল গভীর শান্তি।তান্ত্রিক ধীরে ধীরে বললেন, “তুমি পাশ করেছো। ভয় নয়, বিশ্বাসই জয় আনে। এই বন এখন আবার পবিত্র হল।

”ভীম বুঝল, শুধু তন্ত্র নয়, আত্মবিশ্বাস আর নির্ভীকতাও এক এক রকমের সাধনা।সে রাত থেকে গাঁয়ের লোক আর তান্ত্রিককে ভয় করেনি। বরং তাঁকে ‘অরণ্য-গুরু’ নামে ডাকা শুরু করে।

আমাদের অন্য গায় কাঁটা দেওয়া গল্প :

Another story of my blog

https://bangla.riseofthetimelords.com/bengali-short-story-%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%a8%e0%a7%8b-%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be/

2 thoughts on “বনবাসী তান্ত্রিক”

Leave a Comment

error: Content is protected !!