কন্যাদান : তৃতীয় পর্ব এই গল্পটি একটি গ্রামীণ মেয়ের হৃদয়বিদারক যাত্রার গল্প, যার নাম শ্রাবণী। ছোটবেলা থেকেই সে স্বপ্ন দেখেছিল রঙে ভরা আকাশ ছোঁয়ার, ছবি আঁকার আনন্দে হারিয়ে যাওয়ার এবং পড়াশোনার জগতে ডুব দেওয়ার। কিন্তু গ্রামের মানুষের চাপ, বাবার মানসিক অবস্থা এবং সামাজিক প্রত্যাশার ভার তার কাঁধে এসে ভর করেছিল। যখন একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসে, তখন তার স্বপ্ন ও স্বাধীনতার লড়াই নতুন মাত্রা পায়—একদিকে নিজের ইচ্ছা, অন্যদিকে পরিবারের শান্তি। এই গল্পে দেখানো হয়েছে কিভাবে শ্রাবণী সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এবং সমাজের চাপে কষ্টকর সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়। এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব

কন্যাদান : বিবাহ প্রস্তাব
প্রথম প্রস্তাব এল গ্রামের এক আত্মীয়ের ছেলে, রাজু। সে শহরে চাকরি করতো, তার বাবা-মা ভদ্রতা বজায় রেখে বললেন, “শ্রাবণী, তুমি আমাদের ছেলে রাজুর সঙ্গে একটু হাঁটবে? আমরা চাই তোমার ভদ্র আচরণ দেখি।” শ্রাবণী অপ্রস্তুত, কিন্তু চুপচাপ উঠে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে সে ঘরের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে লাগল। রাজুর পরিবার চোখে চোখে দেখছিল। তার বাবা কেবল মুখে কোনো শব্দ ছাড়ল না, নিঃশব্দে স্থির হয়ে বসে ছিলেন। মা, পুরো দৃশ্যটি ঠান্ডা চোখে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, যেন এক পরিক্ষক—না কোনো উৎসাহ, না কোনো উদ্বেগ। শ্রাবণীর বুক ভারী, পা হালকা কাঁপছে। সে জানত, এই হাঁটা শুধু শিষ্টাচার নয়, বরং তার স্বাধীনতার সীমারেখা দেখানোর একটি পরীক্ষা।
দ্বিতীয় প্রস্তাবটি এল কলকাতায় থাকা বড় জমিজমার ছেলে, বরণ। তার পরিবারের সদস্যরা ঘরে প্রবেশ করলেন, উপহার নিয়ে, এবং বললেন, “শ্রাবণী, আমরা আশা করি তুমি আমাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাবে।” শ্রাবণী বিনয়ী হেসে মাথা নাড়ল, কিন্তু কোনো হাঁটার দৃশ্য ঘটল না। বাবা নীরব, মা ঠান্ডা চোখে শুধু পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন ।
তৃতীয় প্রস্তাব এল প্রিয়াঙ্ক, এক দূরের আত্মীয়ের ছেলে। তার পরিবারের লোকেরা বলল, “শ্রাবণী, আমরা চাই তুমি আমাদের ছেলে ও পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হও।” শ্রাবণী বিনয়ীভাবে তাদের শুভেচ্ছা জানাল, কিন্তু কোনো হাঁটা বা চলাচলের প্রয়োজন হয়নি।
চতুর্থ প্রস্তাব এল রোহিতের পরিবার। তারা বলল, “শ্রাবণী, আমরা চাই তুমি আমাদের সঙ্গে কিছুটা কথা বলো।” শ্রাবণী বিনয়ীভাবে কথাগুলো শুনল, মাথা নিচু করে সম্মতি দিল। বাবা তখনও চুপ, মা ঠান্ডা চোখে পুরো দৃশ্য দেখছিলেন।প্রতিটি প্রস্তাবের সঙ্গে তার হৃদয় ভারী হতে লাগল। চারপাশের মানুষ, ও, বাবা-মায়ের দৃষ্টি—সবই যেন বলছে, “সময় শেষ, সিদ্ধান্ত নাও।” প্রতিটি প্রস্তাব তার জন্য চাপের দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার বুকের ভার সব প্রস্তাবের ক্ষেত্রে একই রকম। তার নিজের স্বপ্ন, পড়াশোনা, ছবি আঁকা—সবই যেন ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে চেনা মানুষ গুলো তার অচেনা হয়ে গেলো ।
আমাদের অন্য মজার গল্প : বিপিন বাবু

যদি আপনার আসে পাশে এমন কোনো মেয়ে থাকে তাহলে তাকে সাহায্য করুন ।
https://devipeethindia.com/ এই ওয়েবসাইট এর কথা বলে
1 thought on “কন্যাদান : তৃতীয় পর্ব”