(একটি কলেজ জীবনের প্রেমের গল্প)
কলেজের প্রথম দিন, শ্রুতির পায়ে হাই হিল, হাতে নতুন নোটবুক আর চোখে স্বপ্ন। কলকাতার বিখ্যাত কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হয়েছে সে। প্রথম ক্লাসেই বুঝে গেল, এই জায়গাটা আলাদা — গম্ভীর, চুপচাপ আর প্রচণ্ড প্রতিযোগিতাময়।
ক্লাসের এক কোণে, প্রথম বেঞ্চে বসে থাকা ছেলেটাকে চোখে পড়লো তার — নাম অরিন্দম। কালো চশমা, পরিপাটি জামা আর সোজা করে বসে থাকা। অন্য কেউ হয়তো চোখে পড়তো না, কিন্তু শ্রুতি তার ঠান্ডা চোখের ভাষা দেখে কেমন যেন থমকে গেল।
প্রথম কয়েক সপ্তাহ ওদের কোনো কথাবার্তা হয়নি। অরিন্দম সবসময় নিজের জগতে মগ্ন, বই পড়া, নোট নেওয়া আর ক্লাসে প্রশ্ন করা ছাড়া কিছু করতো না। শ্রুতি ছিল একদম উল্টো — ফ্রেন্ডলি, প্রাণবন্ত আর গল্পপ্রিয়।
একদিন সাহিত্যের একটি গ্রুপ প্রেজেন্টেশনে ওদের একই দলে পড়তে হলো। প্রথম মিটিংয়ে অরিন্দম শুধু বলল,— “তুমি রবীন্দ্রনাথ কভার করো, আমি তুলনামূলক বিশ্লেষণটা করবো।”
শ্রুতি হেসে বলল,— “আচ্ছা ফার্স্ট বেঞ্চার, আমি তোমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো তো?”
অরিন্দম একটু হাসলো, চোখে খেলে গেলো নরম একটা আলো।প্রেজেন্টেশনটি দারুণ হলো। শ্রুতি নিজের ভঙ্গিতে সাবলীলভাবে বললো, আর অরিন্দম তার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ দিয়ে সবার মন জয় করলো। সেই দিন থেকেই দুজনের মধ্যে কথা বাড়তে লাগলো।
লাইব্রেরিতে দেখা, ক্যান্টিনে একসঙ্গে চা খাওয়া, আর কলেজ শেষে হাঁটা— ধীরে ধীরে ওরা একে অপরের অভ্যস্ত হয়ে উঠলো।

একদিন শ্রুতি জিজ্ঞেস করলো,— “তুমি এত চুপচাপ কেন? তোমার কোনো বন্ধু নেই?”
অরিন্দম বলল,— “আমার মা বলে, বেশি কথা বললে নাকি মনের কথা হারিয়ে যায়। তাই লিখি, চুপ করে থাকি।”
তারপর একদিন শ্রুতি খুঁজে পেল অরিন্দমের খাতায় একটা কবিতা:”প্রথম বেঞ্চে বসা আমার গল্পটাপেছনের সারির চঞ্চল চোখে হারিয়ে যায়…”
শ্রুতি বুঝে গেল, সে প্রেমে পড়ে গেছে। অরিন্দমও হয়তো। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। যেন চোখের ভাষাই যথেষ্ট।
কলেজ ফেস্টের দিন, শ্রুতি সাহস করে বলল,— “তুই যদি বলিস, আমি তোকে নিয়ে পালাতে পারি।”
অরিন্দম হেসে বলল,— “তুই তো এমনিই আমায় নিজের জগতে নিয়ে চলে এসেছিস। আর পালাবার দরকার হয়নি।”
বৃষ্টিতে ভেজা ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল তারা। চারপাশ নিঃস্তব্ধ, শুধু বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ যেন হৃদয়ের স্পন্দন। শ্রুতির ভেজা চুল গাল ছুঁয়ে যাচ্ছিল, অরিন্দমের চোখে ছিল অপরাধবোধ আর অপেক্ষার হাহাকার।
শ্রুতি ধীরে কাছে এগিয়ে এলো। তার চোখে মমতা আর একটুখানি অভিমান। অরিন্দম কাঁপা হাত শ্রুতির গাল ছুঁয়ে বলল, “তুই না বললে আর কোনদিন বলার সাহস পেতাম না।”এক মুহূর্ত নীরবতা।তারপর খুব ধীরে শ্রুতির ঠোঁট ছুঁয়ে গেল অরিন্দমের ঠোঁটে—নরম, নির্ভরশীল, দীর্ঘদিনের চাপা কষ্টকে ভেঙে দেওয়া এক চুম্বন।চারপাশে পৃথিবী থেমে গেল, শুধু ছিল সেই অনুভব।ছাতার নিচে জমে থাকা ভালোবাসা যেন অবশেষে শব্দ পেল ঠোঁটের এক কোমল ছোঁয়ায়।
সেই রাতে কলেজের ছাদে দাঁড়িয়ে, তারা প্রথমবার হাত ধরেছিলো। নিচে শহরের আলো, ওপরে তারা, আর মাঝখানে এক অদ্ভুত শান্তি।

তারা জানতো, ভবিষ্যৎ হয়তো কঠিন হবে। চাকরি, পরিবার, দূরত্ব— সব বাধা আসবে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, অন্তত এই গল্পটা তারা পূর্ণ করবেই।
Written by -Paushali Banerjee
আমাদের Monsun series এর অন্যান্য গল্প গুলো আনন্দ নিন:

কিছু গা ছমছম করা গল্প :
