দুর্গম পাহাড়ের কোলে, কুয়াশায় ঢাকা এক গভীর অরণ্য ছিল। গ্রামের লোকেরা একে বলত “ভয়ের বন”—কারণ বহু বছর আগে কেউ একবার ঢুকে আর ফিরে আসেনি। তবে গুঞ্জন ছিল, ওই বনের গভীরে একজন রহস্যময় সন্ন্যাসী বাস করেন যিনি অতীন্দ্রিয় শক্তির অধিকারী।

একদিন সাহসী যুবক অভিরূপ সিদ্ধান্ত নিল, সে অরণ্যে যাবে। তার উদ্দেশ্য ছিল একটাই—জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া। গাঁয়ের পন্ডিতরা বলল, “সাবধান! ওখানে শুধু গাছ নয়, আত্মাও বাস করে।”তবু অভিরূপ গেল। বনভূমির ভিতরে প্রবেশ করতেই যেন সময় থেমে গেল। পাখির ডাক, পাতার শব্দ—সব কিছু এক অদ্ভুত ছন্দে চলছিল।

হঠাৎ সে অনুভব করল কেউ তাকে অনুসরণ করছে। কিন্তু পিছনে ঘুরে কিছুই দেখতে পেল না।চতুর্থ দিনে, সে পৌঁছাল এক পরিত্যক্ত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে। সেখানে এক বৃদ্ধ বসে ধ্যান করছেন। সাদা চুল, চোখে লাল দীপ্তি, আর চারপাশে যেন এক অলৌকিক আলো বিরাজমান।অভিরূপ জিজ্ঞেস করল,— “আপনি কি সেই সন্ন্যাসী?”বৃদ্ধ চোখ মেললেন, হাসলেন, বললেন,— “তুই খুঁজতে এসেছিস উত্তর, কিন্তু প্রস্তুত কি প্রশ্ন করতে?”অভিরূপ থমকে গেল। তখন সন্ন্যাসী তার দিকে এগিয়ে এসে একটি ছোট আয়না এগিয়ে দিলেন। আয়নায় সে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল না—বরং দেখল নিজের ভয়, লোভ, রাগ, আর অহংকার।সন্ন্যাসী বললেন,— “মানুষ বাইরে খোঁজে ঈশ্বর, অথচ সে বসে আছে ভেতরেই। তুই নিজেকে জানতে চা, তবেই তুই চির সত্যের পথ পাবে।”অভিরূপের চোখে জল এসে গেল। সারা জীবন সে বাইরের জগতে অর্থ, সুখ, খ্যাতি খুঁজেছে—আজ বুঝল, আসল খোঁজ তার নিজের মধ্যে।হঠাৎ ঝড় উঠল। সব কিছু কুয়াশায় ঢেকে গেল। সন্ন্যাসী অদৃশ্য হয়ে গেলেন। অভিরূপ ঘুম ভাঙার মতো অনুভব করল নিজেকে। সে যখন গ্রামে ফিরে এল, তার চোখে এক গভীর শান্তি। কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে শুধু একটিই কথা বলত—
“আমি আর আমি নেই—আমি এখন সব কিছু।”