শ্রাবণী ছিল গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে, কিন্তু তার স্বপ্নগুলো ছিল অসাধারণ। ছোটবেলা থেকেই সে আঁকতে ভালোবাসত। কাগজ, খাতা, এমনকি পুরনো খবরের কাগজও তার রঙতুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠত। দুপুরবেলা কাজ সেরে সবাই যখন ঘুমাত, শ্রাবণী তখন জানালার পাশে বসে গ্রামীণ দৃশ্য আঁকত—পুকুরপাড়ে হাঁসের সারি, তালগাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা সূর্য, কিংবা শিউলি ঝরা উঠোন।

শুধু আঁকাই নয়, বই পড়ার নেশাও ছিল তার। বইয়ের পাতায় পাতায় সে খুঁজে পেত অন্য এক পৃথিবী। তার আয় ছিল সামান্য—গ্রামের বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াত। তবুও সেই সামান্য আয়ে সে নিজের খরচ চালাত, নতুন রঙ কিনত, মাঝে মাঝে মাকে সাহায্যও করত। তার স্বপ্ন ছিল, একদিন হয়তো শহরে গিয়ে ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ নেবে।কিন্তু এসব স্বপ্নের মূল্য ছিল না তার বাবার চোখে।
বাবার কথা আসত ইঙ্গিতে—“মেয়ের বয়স হচ্ছে।”পরে তা চাপের রূপ নিল—“এখনই কিছু না করলে লোকজন কি বলবে?”দিন দিন বাবার মানসিক অবস্থা বদলাতে লাগল। গ্রামের লোকজনের কথায় সে ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হতে লাগল।“এখনও মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছ না?”“বাড়িতে বড় মেয়েকে বসিয়ে রেখেছ?”এসব শোনার পর বাড়ি ফিরে সে শ্রাবণীর উপর রাগ ঝাড়ত।“তুই এত পড়াশোনা করে কি করছিস? আঁকিবুকি করে সংসার চলে? আমার মানসম্মান শেষ হয়ে যাচ্ছে। লোকে কি না কি বলছে!”শ্রাবণী চুপচাপ শুনত। তার বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে উঠত।
তবুও সে আঁকতে বসত, পড়াতে যেত, স্বপ্ন আঁকড়ে থাকত।একদিন সন্ধ্যায় বাবা ঘরে ঢুকে গম্ভীর গলায় বলল—“শুন, তোকে এসব প্রাইভেট পড়ানো ছাড়তে হবে। বাইরে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে লোকে কথা বলছে। কাল থেকে কারও বাড়ি যাবি না।”শ্রাবণী স্তব্ধ হয়ে গেল। তার গলাটা শুকিয়ে এলো।“বাবা… ওগুলো আমার নিজের উপার্জন… আমার স্বপ্নের জন্য…”বাবা থেমে গিয়ে তাকাল তার দিকে—চোখে রাগ আর ক্লান্তির মিশ্রণ।“আমার মান ইজ্জতের চেয়ে বড় কিছু নেই। তুই আমার মেয়ে। যেমন বলছি তেমন কর।”শ্রাবণী আর কিছু বলল না।

মাথা নিচু করে জানালার বাইরে তাকাল। দূরে পাখিরা বাসায় ফিরছে। আর তার নিজের ডানা যেন কেউ ছিঁড়ে নিল। সেদিন রাতেই সে সিদ্ধান্ত নিল—সে সব ছেড়ে দেবে। ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দিল—“কাল থেকে আমি পড়াতে পারব না।”তার স্বপ্নগুলো নিঃশব্দে ভাঁজ হয়ে গেল, ঠিক যেমন হাওয়ায় ভেসে যাওয়া শুকনো শিউলির পাপড়ি।
We also have comedy story in our blog page :

Checkout this website for support :
2 thoughts on “কন্যাদান”