কালকেতু ও অভিশপ্ত কঙ্কণ” হলো কালকেতু সমগ্র-র পঞ্চম অধ্যায়, যেখানে গল্প আরও অন্ধকার ও রহস্যময় পথে এগিয়ে যায়। বাঁশবনের ঘটনার পর কালকেতুর জীবন এক নতুন মোড় নেয়। এবার সে পায় এক অচেনা কঙ্কণ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিশাপ, প্রতিশোধ আর মৃত আত্মার অদৃশ্য ছায়া। এই পর্বে কালকেতু বুঝতে পারে—তার যাত্রা কেবল ভূতের সঙ্গে লড়াই নয়, বরং ভাগ্য আর অশুভ শক্তির সঙ্গে এক অন্তহীন সংগ্রাম।
কালকেতু ধারাবাহিক গল্পের চতুর্থ অংশ:
অভিশপ্ত কঙ্কণ
রাত গভীর, বাঁশবনের গা ঘেঁষা নদীর ঘাটে অদ্ভুত নীরবতা নেমে এসেছে। বাতাসে ভেসে আসছে কাকের ডাক, আর দূরে কুকুরের হুক্কাহুয়া শোনাচ্ছে। চারদিক এমন অস্বাভাবিক লাগছিল যেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে। কালকেতু জানত—আজ রাত অন্যরকম।
গ্রামে কয়েকদিন ধরে গুজব ছড়াচ্ছে—এক অচেনা মানুষকে নাকি নদীর ঘাটে দেখা যায়। তার হাতে থাকে এক ঝলমলে সোনালি কঙ্কণ। কেউ কাছে গেলেই সে হঠাৎ মিলিয়ে যায়। যারা কৌতূহলী হয়ে তার পিছু নিয়েছে, তারা আর স্বাভাবিক হয়ে ফিরতে পারেনি। কেউ অসুস্থ, কেউ আবার উন্মাদের মতো প্রলাপ বকতে থাকে।
গ্রামে কয়েকদিন ধরে গুজব ছড়াচ্ছে—এক অচেনা মানুষকে নাকি নদীর ঘাটে দেখা যায়। তার হাতে থাকে এক ঝলমলে সোনালি কঙ্কণ। কেউ কাছে গেলেই সে হঠাৎ মিলিয়ে যায়। যারা কৌতূহলী হয়ে তার পিছু নিয়েছে, তারা আর স্বাভাবিক হয়ে ফিরতে পারেনি। কেউ অসুস্থ, কেউ আবার উন্মাদের মতো প্রলাপ বকতে থাকে। এখন একমাত্র কালকেতুই পারে এই অশুভ রহস্য ভাঙতে।
সেদিন রাতেই কালকেতু একা চলে গেল নদীর ঘাটে। চারদিকে ভৌতিক নীরবতা, নদীর জলে চাঁদের অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব। হঠাৎ হাওয়ার ঝাপটা বয়ে গেল। বাঁশবনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এলো এক দীর্ঘকায় মানুষ। মুখটা ছায়ায় ঢাকা, কিন্তু চোখে অদ্ভুত দীপ্তি। তার ডান হাতে একটি সোনালি কঙ্কণ ঝলমল করছে।
কালকেতু সাবধানে বলল——“কে তুমি? এই কঙ্কণ কেন তোমার হাতে?”
লোকটা ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিল,—“এই কঙ্কণ আমার জীবন। যার হাতে থাকবে, তার মৃত্যু নিশ্চিত।”

বলেই সে পাগলের মতো হাসতে শুরু করল। হাসিটা এত ভয়ঙ্কর ছিল যে রাতের অন্ধকারও যেন কেঁপে উঠল। কালকেতুর বুক কেঁপে গেলেও সে স্থির রইল।লোকটা হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল তার দিকে।
কালকেতু দ্রুত সরতে না সরতেই মাটিতে ভারী আঘাত লাগল। লোকটার শরীর থেকে যেন অস্বাভাবিক শক্তি বেরোচ্ছিল। তার চাহনি মানুষসুলভ নয়, যেন দগ্ধ প্রতিহিংসার আগুন।কালকেতু মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করল। শব্দে চারদিক কাঁপতে লাগল। লোকটা চিৎকার করে উঠল——“থামো!
আমি মরতে চাই না। আমি প্রতারিত, আমি লাঞ্ছিত। এই কঙ্কণই আমার অভিশাপ।”মন্ত্রের আলোয় কালকেতু দেখতে পেল আসল কাহিনি। লোকটা একসময় ছিল গ্রামের স্বর্ণকার। ধনী মহাজনদের কাছে প্রতারিত হয়ে সে নিজের সব হারায়।
একমাত্র স্ত্রীর দেওয়া সোনালি কঙ্কণই ছিল তার ভরসা। কিন্তু সেই কঙ্কণ লোভী মহাজনের হাতে চলে যায়, আর তার অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর পর থেকেই তার আত্মা কঙ্কণের সঙ্গে বাঁধা পড়ে থাকে, প্রতিশোধে পাগল হয়ে ওঠে।
কালকেতু দৃঢ়ভাবে বলল——“তুমি যা করছো তা তোমাকে শান্তি দেবে না। প্রতিশোধে মুক্তি নেই। কঙ্কণ ধ্বংস হলেই তুমি মুক্ত হবে।”লোকটা ছটফট করতে লাগল, চোখ রক্তবর্ণ হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে বলল,—“না! এটা ছাড়া আমি কিছুই নই।”
কিন্তু কালকেতু পিছু হটল না। সে ধুনুচির আগুন তুলে কঙ্কণের দিকে বাড়িয়ে দিল। আগুনে কঙ্কণ ছুঁতেই তীব্র শিখা উঠল, আর লোকটা এক বিকট চিৎকার করে অদৃশ্য হয়ে গেল। অন্ধকার ছিন্ন করে রাত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল এক অদ্ভুত গন্ধ—যেন অনেক বছরের বন্দিত্ব ভেঙে কারও মুক্তি হলো।
পরদিন গ্রামে খবর ছড়াল। মানুষ অবাক হয়ে জানল, কালকেতু আবারও এক অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করেছে। কিন্তু কালকেতু জানত—এ লড়াই কেবল শুরু। পৃথিবীতে আরও অনেক অভিশাপ, আরও অনেক অদৃশ্য শৃঙ্খল ছড়িয়ে আছে।
আর তার ভাগ্যেই বোধহয় লেখা আছে তাদের মুখোমুখি হওয়া।সেই রাতে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে কালকেতু একা ভাবছিল—“শক্তি মানে কেবল ধ্বংস নয়, শক্তি মানে মুক্তি। আমি যদি ভীত হই, তবে তারা জিতবে। আমার কাজ তাদের শান্তি দেওয়া, যদিও তা রক্ত আর আগুনের মধ্য দিয়েই আসুক।”
কালকেতু ধারাবাহিক এর দ্বিতীয় অধ্যায়

1 thought on “কালকেতু ও অভিশপ্ত কঙ্কণ”