আজ আবার একটা নতুন বাংলা ছোট গল্প নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের জন্য।

বাংলা ছোট গল্প:শহরের বুকে অদ্ভুত ছায়া
কলকাতার এক নিরিবিলি সকালে, কফি হাউসের উলটো দিকের এক পুরনো দোতলা বাড়ির বারান্দায় বসে ছিল শিরিষ সেন। বিশিষ্ট অপরাধ অনুসন্ধানী সাংবাদিক, ‘সন্ধ্যানুসন্ধান’ পত্রিকার বিশেষ কলম লেখে সে। কফির কাপ হাতে, সে জানলার ধারে তাকিয়ে ছিল কলেজ স্ট্রিটের দিকে, কিন্তু মনটা পড়ে ছিল গতরাতের ফোনকলের কথায়।“আপনাকে একখান গল্প দিতে পারি, মশাই, তবে এ গল্প ছাপলে আপনি বাঁচবেন কিনা, সে নিয়ে আমার সন্দেহ আছে,”—অচেনা কণ্ঠ।“গল্প না, সত্যি চাই,”—শিরিষ উত্তরে বলেছিল।“সত্যিটাই তো ভয়ংকর, মশাই। সাউথ কলকাতার এক পুরনো জমিদার বাড়িতে প্রতি পূর্ণিমায় এক ছায়ামূর্তি দেখা যায়। লোক বলছে, সে নাকি একশো বছর আগের খুনের প্রতিশোধ নিতে এসেছে।”শিরিষ হেসে বলেছিল, “ঠিকানা বলুন।”“৭৪, বকুলবাগান লেন। কিন্তু সাবধানে যান। রাতের পর রাত কেউ সেখানে একবার গেলে আর ফেরেনি…”

জমিদার বাড়ির রহস্য
সন্ধ্যে নেমেছে। শিরিষ দাঁড়িয়ে আছে সেই পুরনো বাড়িটার সামনে—৭৪, বকুলবাগান লেন। উঁচু পাঁচিল, জং ধরা লোহার গেট, বাড়ির দেওয়ালে ঝুলে পড়া বোগেনভেলিয়ার ডাল। গেটের তালা ভাঙা। আশপাশে কেউ নেই। একা ঢুকে পড়ল ভেতরে।বাড়ির সদর দরজা ছিল আধা খোলা। মেঝেতে ধুলো জমে আছে। দেয়ালে পুরনো তেলচিত্র, এক মহিলা সাদা শাড়ি পরে বসে আছেন, তার চোখ যেন শিরিষের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ! কেউ যেন দোতলার ঘর থেকে আস্তে করে দরজা খুলছে।শিরিষ টর্চ জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উঠল। হঠাৎ শুনতে পেল ফিসফিস শব্দ—“সত্যি ফিরে এসেছি… এবার শেষ হবে অন্যায়…”হঠাৎই ঠান্ডা বাতাস, ঘরটা যেন জমে গেল। জানলার পাশে এক ছায়ামূর্তি। সাদা কাপড়ে ঢাকা শরীর, মুখ ঢাকা চুলে। হঠাৎ ঘর কাঁপতে শুরু করল। সেই মুহূর্তেই অন্ধকার।
পুরনো ফাইল, নতুন মোড়
পরদিন সকালে শিরিষ উপস্থিত হল কলকাতা পুলিশ আর্কাইভে। অফিসার প্রিয়দর্শিনী বসুর সঙ্গে তার বহুদিনের আলাপ। সে পুরনো অপরাধ সংক্রান্ত ফাইল ঘাঁটতে লাগল।১৯২২ সালের ফাইল। ‘অমৃতলাল বসু হত্যা মামলা’। জমিদার, বিপুল সম্পত্তির মালিক, সন্দেহজনকভাবে তার ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে ছিলেন। আত্মহত্যা বলেই ফাইল বন্ধ। কিন্তু পাশে লেখা, “স্থানীয়দের মতে, তার স্ত্রী প্রতিমা দেবীকে অমৃতলাল বিষ খাইয়ে খুন করেছিলেন। প্রমাণ মেলেনি।”শিরিষ খোঁজ নিল, সেই প্রতিমা দেবী কে ছিলেন? আরও খোঁজে জানা গেল, প্রতিমা দেবী নাকি অমৃতলালকে খুন করেননি। উল্টে তাকে মানসিক অত্যাচারে পাগল করে তোলা হয়েছিল। এক রাতে নিখোঁজ হন তিনি। কেউ বলেন, বাড়িরই কোথাও তাকে কবর দেওয়া হয়।

সাক্ষী ও ছায়ার দেখা
শিরিষ এবার গেল সেই এলাকার একজন বৃদ্ধ লোকের কাছে—মদনবাবু, ৮৩ বছর বয়স, ছোটোবেলায় সেই বাড়ির পাশেই থাকতেন।মদনবাবু বললেন, “প্রতিমা দেবী ছিলেন খুব সুন্দরী আর দয়ালু। সবাই বলত, অমৃতলাল তাকে ভালবাসতেন না। একবার এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছিলেন প্রতিমা, অমৃতলাল তাকে মারধোর করে তাড়িয়ে দেন।”“তারপর?” শিরিষ আগ্রহে জিজ্ঞেস করল।“তারপর এক পূর্ণিমা রাতে, প্রতিমা নিখোঁজ। কেউ দেখে নি তাকে আর। তবে ওই রাত থেকেই বাড়ির জানলায় সাদা কাপড়ের ছায়া দেখা যেতে লাগল।”শিরিষ এবার বুঝল, এখানে কিছুর সত্যতা আছে। রাতে আবার গেল বাড়িটিতে। সঙ্গে রাখল রেকর্ডার, ক্যামেরা ও ল্যাপটপ।
ছায়ার মুখোমুখি
রাত
১২টা। পূর্ণিমা। বাড়ির দোতলার জানলায় আবার সেই ছায়ামূর্তি। এবার সে ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাল শিরিষের দিকে। হঠাৎ রেকর্ডার নিজে নিজে চালু হয়ে গেল।ছায়াটি বলল, “আমি প্রতিমা… বিচার চাই… আমার শরীর এই বাড়িরই মেঝের নিচে… তাকে খুঁজে বের করো… নইলে প্রতি পূর্ণিমা এক প্রাণ হারাবে…”পরদিন সকালেই পুলিশকে জানাল শিরিষ। মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল এক নারী কঙ্কাল। ডিএনএ পরীক্ষায় মিলে গেল, প্রতিমা দেবীর পরিচয়
অশরীরীর মুক্তি
কঙ্কাল সৎকার করা হল বৈদিক নিয়মে। সেই রাতের পর বাড়ির ছায়া আর দেখা যায়নি। শিরিষ সেই ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন লেখে ‘সন্ধ্যানুসন্ধান’-এ, শিরোনাম—”এক শতাব্দীর অপেক্ষা: প্রতিমার মুক্তি”।কিন্তু ঘটনার শেষে, শিরিষ তার ব্যাগ খুলে দেখে, এক সাদা কাপড়ের ছোট টুকরো পড়ে আছে ভেতরে, যার গায়ে লেখা—
“ধন্যবাদ… কিন্তু অন্যায় থেমে থাকে না… আবার ফিরব…”
আমাদের অন্য মজার মজার গল্প :

https://bangla.riseofthetimelords.com/bengali-story-chader-aloy-sonali/

1 thought on “বাঙলা ছোট গল্প – “শহরের ছায়ামূর্তি””