গ্রামের এক সাধারণ মেয়ের গল্প, যার স্বপ্ন ছিল রঙে ভরা আকাশ ছোঁয়ার। কিন্তু সমাজের বাঁধন, বাবার মানসিক চাপ আর লোকের কথার আঘাতে সে স্বপ্নকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এটি শ্রাবণীর যন্ত্রণার, ত্যাগের ও নিঃশব্দ হারানোর কাহিনি। নিচে কন্যাদান এর প্রথম পর্ব:

কন্যাদান:(দ্বিতীয় পর্ব)
শ্রাবণীর বাবার মানসিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। বাইরে থেকে তিনি যতই শক্ত করে কথা বলতেন, ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছিলেন। গ্রামের লোকদের কটুক্তি যেন প্রতিদিন ছুরি হয়ে বিঁধত তার মনে। উঠোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলেই ফিসফাস, হঠাৎ করে থেমে যাওয়া হাসি—সবই তার চোখ এড়াত না।“তোমার মেয়ের কি হচ্ছে না?”—পাড়ার বুড়ি মায়ের উদ্দেশে বলেই চলে যেত।“এখনও ঘরে বসিয়ে রেখেছ? মেয়েদের বেশি পড়াশোনা করালে এরকমই হয়।”এইসব কথায় তিনি ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন। বাড়ি ফিরেই রাগ ঝাড়তেন, কখনও থালাবাসন ভাঙতেন, কখনও গভীর রাতে একা বারান্দায় বসে থাকতেন। শ্রাবণী দরজার ফাঁক দিয়ে বাবাকে দেখত—মুখটা নিস্তেজ, চোখদুটো লাল, ঠোঁটের কোণে চাপা কষ্ট। সে জানত, এই মানুষটা একসময় কত হাসিখুশি ছিলেন। এখন তিনি যেন ভেঙে পড়া এক দেওয়াল।এদিকে প্রস্তাব আসতে লাগল একের পর এক। কারও ছেলে শহরে চাকরি করে, কারও আছে জমিজমা। শ্রাবণী নানাভাবে এড়াতে চেষ্টা করত—কখনও বলত, “আমার এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি”, কখনও ইঙ্গিত দিত, “আমি এখনও প্রস্তুত নই।” কেউ কেউ অপমান করেও চলে যেত—“মেয়েটার বয়স হচ্ছে, তবু এত বাছবিচার!”বাবার কপালের ভাঁজ আরও গভীর হলো। একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সেদিন রাতে ডাক্তার এসে বলল—“চিন্তা কমাতে হবে, মানসিক চাপ খুব বেশি।”শ্রাবণী জানল, তার বাবার অসুখ শুধু শরীরের নয়, মনেরও। তার বুকটা হুহু করে উঠল। সে মাকে জিজ্ঞেস করল—“আমার জন্যই কি বাবা এমন?” মা চুপ করে চোখ মুছলেন। কোনো উত্তর দিলেন না, কিন্তু সেই নীরবতাই সব বলে দিল।এরপরও শ্রাবণী একবার চেষ্টা করেছিল। এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে সে স্পষ্ট জানাল—“আমি এখন বিয়ে করব না।” ফেরার পথে বাবা তাকে একটিও কথা বললেন না। রাতে হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দে শ্রাবণী চমকে উঠল। বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, চোখে জল। “আমি পারছি না মা… গ্রামের লোকজনের কথা, আত্মীয়দের চাপ… আমার মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।”সেই মুহূর্তে শ্রাবণী বুঝল, তার স্বপ্ন হয়তো বাবার বেঁচে থাকার চেয়েও ছোট। পরদিন সকালে সে মাকে বলল—“যাকে ভালো মনে হয়, বলে দাও।”। শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে উঠল উঠোন। দিয়ে তাকিয়ে সে দেখল, বাড়ির উঠোনে ঝরা শিউলি পাপড়ি উড়ছে হাওয়ায়। তার স্বপ্নগুলোর মতো—নিঃশব্দে, অদৃশ্য হয়ে।
আমাদের অন্য মজার গল্প : কমেডি কিং বিপীনবাবু

Devipeeth India Foundation :
ওয়েবসাইট: devipeethindia.com — তারা গ্রামীণ মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক সম্ভাবনা ও সামাজিক সচেতনতার উন্নয়নে কাজ করে .
1 thought on “কন্যাদান:স্বপ্ন ভাঙার আড়ালে নীরব আত্মত্যাগ”