এক নারীর পরকীয়া” গল্পের প্রথম পর্বে আমরা দেখেছি মিতালির নীরস, দরিদ্র সংসার আর তার অন্তরের অদৃশ্য আকাঙ্ক্ষা। গ্রামের ধুলোভরা জীবন তাকে ক্লান্ত আর অবসন্ন করে তুলেছে। হঠাৎই সেই নীরস জীবনে ঝড়ের মতো প্রবেশ করে অর্ণব—এক শহুরে ধনী যুবক। তার আভিজাত্য, দামি জীবনযাপন আর মায়াবী কথায় মিতালির ভেতরে জেগে ওঠে অজানা অনুভূতি।
প্রথম পর্ব:
এই দ্বিতীয় পর্বে, অর্ণব গ্রামের মধ্যে কিছুদিনের জন্য থেকে যায় এবং ধীরে ধীরে তার মোহময় উপস্থিতি দিয়ে মিতালির মনে প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একদিন হঠাৎ মিতালি বুঝতে পারে, তার হৃদয় আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই—সে অর্ণবের প্রেমে পড়ে গেছে।
দ্বিতীয় পর্ব
গ্রামের ধুলোভরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল মিতালি। তার গায়ে ছিল সাধারণ সুতির শাড়ি, মাথায় সামান্য সিঁদুর, হাতে পুরোনো কাঁকন। দরিদ্র জীবনের ক্লান্তি তার চোখে-মুখে স্পষ্ট। ঠিক তখনই গ্রামের পুকুরপাড়ে ধুলো উড়িয়ে থামল এক চকচকে কালো গাড়ি।গাড়ি থেকে নেমে এল অর্ণব। শহুরে আভিজাত্যে ভরা তার চেহারা—চোখে দামি রোদচশমা, হাতে সোনার ঘড়ি।
গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে গ্রাম যেন মুহূর্তে থমকে গেল। কৌতূহলী মানুষজন ভিড় জমাতে লাগল।অর্ণব মিতালির দিকে একবার তাকাল, তারপর হাসিমুখে বলল,— “আপনার নাম মিতালি, তাই না? শুনেছি, আপনি রণজয়ের স্ত্রী।”মিতালি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,— “আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে?”অর্ণব হালকা হেসে বলল,— “আমি এই গ্রামে কিছু জমি কিনতে এসেছি। গ্রামে কোনো গোপন খবর থাকে না। আপনার মতো কাউকে শহরে পেলে অনেক বড় কিছু করতে পারতাম।”এই কথাটা মিতালির হৃদয়ে অদ্ভুত এক কম্পন জাগাল। সে চুপ করে থাকলেও অর্ণবের মায়াবী দৃষ্টি তার মনে অজানা আলোড়ন তুলল।কয়েকদিনের মধ্যে অর্ণব সিদ্ধান্ত নিল, সে কিছুদিন গ্রামেই থাকবে। গ্রামের মাঝখানে একটি বড়ো দোতলা ভাড়া করল, সঙ্গে শহর থেকে দামি আসবাবপত্র এনে সাজাল। প্রতিদিন সে গ্রামে নতুন নতুন পোশাক পরে বেরোত, দামি পারফিউমের গন্ধে চারদিক ভরে যেত। গ্রামের মানুষজন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত, আর মিতালির চোখও অজান্তে তার দিকে টান অনুভব করত।প্রথমে মিতালি দূরে দূরেই থাকত। কিন্তু অর্ণব সুযোগ পেলেই তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করত।
কখনো তাকে গাড়িতে ঘুরতে নিয়ে যেত, কখনো শহরের গল্প শোনাত, আবার কখনো ছোটখাটো উপহার দিত—চুড়ি, শাড়ি, কিংবা লিপস্টিক।মিতালির স্বামী রণজয় প্রতিদিন খেতে যেত ক্ষেতে কাজ করতে, আর মিতালির দিন কাটত সংসারের কাজের ক্লান্তিতে। অর্ণবের আভিজাত্য, তার নিরুদ্বেগ হাসি, আর শহুরে কেতা মিতালির শূন্য জীবনে এক ঝলক আলো হয়ে উঠল।
একদিন বিকেলে, অর্ণব পুকুরপাড়ে মিতালিকে একা পেয়ে ফিসফিস করে বলল,— “তুমি জানো মিতালি, তোমার হাসিটা শহরের যে কোনো গয়নার চেয়েও দামি। আমি চাই না তুমি সবসময় কষ্টে থাকো।”এই কথা শুনে মিতালির বুকের ভেতর অদ্ভুত কাঁপুনি উঠল। সে প্রতিবাদ করতে চাইল, কিন্তু কথা বেরোল না। অর্ণবের চোখের গভীরতায় সে হারিয়ে গেল এক মুহূর্তের জন্য।সেদিন রাতে মিতালি নিজের খাটে শুয়ে ছিল, কিন্তু ঘুম আসছিল না। তার মনে বারবার অর্ণবের মুখ ভেসে উঠছিল—তার দামি পোশাক, আত্মবিশ্বাসী হাসি, মায়াবী কণ্ঠস্বর।
হঠাৎ সে বুঝতে পারল, তার হৃদয় আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই।মিতালি নিঃশব্দে চোখ বন্ধ করল, বুকের ভেতর স্বীকার করল—সে অর্ণবের প্রেমে পড়ে গেছে।

এক নারীর পরকীয়া: মিতালির সঙ্গে তর্ক
পরবর্তীতে, সেই রাতে রণজয় ক্লান্ত শরীরে ক্ষেতে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরল। প্রথমেই খেতে বসে সে বিরক্ত স্বরে মিতালিকে প্রশ্ন করল,— “আজ সারাদিন কোথায় ছিলি? গাঁয়ের লোকজন নানা কথা বলছে।”প্রথমে, মিতালি চুপ করে রইল।
কিন্তু ক্রমে রণজয়ের কণ্ঠের রুক্ষতা তাকে ক্ষুব্ধ করে তুলল। অবশেষে, সে তীব্র গলায় জবাব দিল,— “আমার সারাদিনের খোঁজ রাখার সময় তোমার হয় না, অথচ গাঁয়ের লোকের কথা শোনার সময় হয়! আমারও স্বপ্ন আছে, আমারও ইচ্ছে আছে, সবকিছু কি শুধু তোমার জন্য বিসর্জন দিতে হবে?”এদিকে, রণজয় রাগে চিৎকার করে উঠল,— “তুই আমার স্ত্রী, আমার কথাই শেষ কথা!”ফলস্বরূপ, মিতালির চোখে জল চলে এলো, কিন্তু সে দমল না। তর্ক ক্রমশ বাড়তে লাগল। শেষ পর্যন্ত, ক্ষোভে কাঁপতে কাঁপতে মিতালি বুঝল—সে আর রণজয়ের সঙ্গে থাকতে চায় না, বরং তার হৃদয় পুরোপুরি অর্ণবের দিকেই টান অনুভব করছে।
check out this post:
1 thought on “এক নারীর পরকীয়া দ্বিতীয় পর্ব”