আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে একটি ছোট গল্প ভুতের বগি ।
শুভ বসে আছে হাওড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা রাত ১১:৪৫-এর হিমগিরি এক্সপ্রেসে। শীতকাল, জানুয়ারির কুয়াশা।
সীট নম্বর S6, 23। তার সঙ্গে কেউ নেই, আশপাশের বার্থগুলো বেশিরভাগই ফাঁকা।ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারে কিছু অস্বাভাবিক।
হঠাৎ করেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। জানলার বাইরে ঘন অন্ধকার আর কুয়াশার মাঝে অদ্ভুত এক ছায়া যেন কিছুক্ষণ ভেসে রইল।কিছুক্ষণ পর ট্রেন এক অজানা স্টেশনে থামে। কোনো নাম লেখা নেই, ঘড়ি বা আলোও নেই।
শুধু দাঁড়িয়ে থাকা এক বুড়ো লোক — সাদা ধুতি আর শাল গায়ে, মাথা নিচু।লোকটা ধীরে ধীরে উঠল S6 কামরায়। শুভ অবাক —
এই অন্ধকারে কেউ উঠছে, অথচ কাউকে কিছু না বলেই?লোকটা সোজা এসে বসে পড়ল S6, 24 নম্বর সীটে।
শুভ একটু অস্বস্তিতে পড়ল। চেষ্টা করল কথোপকথনের।— “আপনি কোথা যাবেন?”
বুড়ো লোকটা মুখ তুলে তাকাল। চোখদুটি লালচে, মুখে কোনো আবেগ নেই। সে শুধু বলল,— “আমার গন্তব্য এই ট্রেনেই শেষ হবে।”
শুভ একটু গা ছমছমে অনুভব করল, কিন্তু কিছু বলল না।রাত যত বাড়ে, তত অদ্ভুত লাগতে থাকে। হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস যেন কামরার মধ্যে বইতে থাকে। একটা সময় শুভ চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম ভাঙে একটা গলায় — কেমন যেন কাঁপা কাঁপা আওয়াজ।— “আমার সিটটা ফিরিয়ে দাও…”চোখ মেলে দেখে, বুড়ো লোকটা নেই।
কিন্তু তার জায়গায় বসে আছে এক মহিলা — পেটিকোট আর ব্লাউজ পরা, গায়ে নেই কোনো চাদর, ভেজা চুল আর গলা অবধি কাদা-মাটি। তার ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি।শুভ ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যায়, কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।
মহিলাটি ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে আসে এবং ফিসফিস করে বলে — “এটা আমার কামরা ছিল… আমি মারা গেছি… এই ট্রেনে… দশ বছর আগে… এখন তুই…”শুভ ছিটকে উঠে দাঁড়ায়, চোখে পানি, শরীর জমে গেছে।
বাইরে তাকিয়ে দেখে আবার সেই অদ্ভুত স্টেশন। ট্রেন থেমে নেই, কিন্তু জানলার পাশে দেখা যাচ্ছে সেই বুড়ো লোকটা — এবার একদম জানালার ঠিক বাইরে তাকিয়ে।এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, সারা কামরাটা যেন শীতল মৃত্যুর স্পর্শে ঢেকে গেছে।
সবার মুখে অদ্ভুত শূন্যতা, কেউ কথা বলছে না, সবাই চুপচাপ বসে। কেউ যেন নেই, অথচ সবাই আছে।শুভ হঠাৎ দেখতে পায়, তার হাতে একটা পুরোনো টিকিট। তাতে লেখা:
সেই মুহূর্তে একটা ঠান্ডা হাওয়া তার ঘাড়ে লাগে, আর পেছন থেকে ভেসে আসে সেই গলা —
S6 – 23 | যাত্রীর নাম: অজ্ঞাত মৃতদেহ | তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫”

“তুই এখন আমার জায়গায়…”ট্রেন চলতে থাকে, কিন্তু S6 কামরার ২৩ নম্বর সীট আর কখনো বুক করা যায় না।
আমাদের অন্যান্য কিছু মজার গল্প:

1 thought on “ভূতের বগি”